প্রতিদিন আমরা প্রচুর তথ্য পাই। এই তথ্য প্রতিনিয়তই বাড়ছে। কিছু তথ্য সঠিক আবার কিছু তথ্য সঠিক নয়। তথ্য খুঁজে পেতে, বুঝতে, মূল্যায়ন ও ব্যবহার করতে আমাদের যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে হবে।
প্রশ্ন : তথ্য বিনিময় কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
কাজ : কী হবে যদি তথ্যটি আমাদের জানা না থাকে ?
কী করতে হবে :
১. নিচে দেখানো ছকের মতো একটি ছক তৈরি করি।
তথ্য | কী হবে ? |
---|---|
২. যত বেশি সম্ভব তথ্যের একটি তালিকা ছকে লিখি।
৩. ছকে লেখা তথ্যটি যদি আমাদের জানা না থাকে তাহলে কী ঘটবে ?
8. এ ব্যাপারে ধারণাগুলো ছকে লিখি ।
৫. কাজটি নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি।
আমাদের জীবনে তথ্যের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। তথ্য আমাদের নতুন কিছু শিখতে ও কী করতে হবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করে। তাই আমাদের তথ্য জানতে হবে এবং সকলের সাথে তা বিনিময় করতে হবে। তথ্য বিনিময় হলো একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে কোনো তথ্য বন্ধু, পরিবার এবং অন্যান্য মানুষের সঙ্গে আদান প্রদান করা হয়। তথ্য বিনিময় আমাদের নিরাপদ থাকতে, ভালোভাবে বাঁচতে এবং বিপদ থেকে রক্ষা পেতে সাহায্য করে।
আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় জীবনে তথ্য বিনিময়ের গুরুত্ব অপরিসীম। দেশে সংক্রামক রোগ যেমন—ফু ছড়িয়ে পড়তে পারে এই তথ্যটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হলে ফ্লুতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি হ্রাস পাবে। মানুষ এই তথ্যটি জানতে পেরে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে রোগ থেকে রক্ষা পাবে। আবার মনে কর, আবহাওয়াবিদরা জানালেন যে, প্রচণ্ড জলোচ্ছ্বাস হবে। এই তথ্যটি বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হলে সমুদ্র উপকূলের অনেক মানুষের জীবন ও সম্পদ রক্ষা পাবে। সমুদ্রের মাছ ধরার ট্রলার ও জাহাজগুলো নিরাপদ আশ্রয়ে থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষা করতে পারবে।
আমরা বিভিন্নভাবে তথ্য বিনিময় করতে পারি। যেমন— অন্যের সাথে কথা বলে, চিঠি লিখে ইত্যাদি। বর্তমানে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) তথ্য বিনিময়ের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। কম্পিউটার, ইন্টারনেট, ইমেইল, টেলিভিশন, রেডিও, মোবাইল ফোন ইত্যাদি হলো আইসিটি। আইসিটি মানুষের পারস্পরিক যোগাযোগ সহজ করেছে। আইসিটি ব্যবহার করে সহজেই তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ, বিনিময়, বিস্তার ও ব্যবহার করা যায়।
প্রশ্ন : প্রযুক্তি ব্যবহার করে আমরা কীভাবে তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিনিময় করতে পারি?
(১) ইন্টারনেট ব্যবহার করে আমরা কীভাবে সহজে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি ?
আমরা বই, খবরের কাগজ, টেলিভিশন অথবা রেডিওর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। তবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করা অনেক সহজ। ইন্টারনেট হচ্ছে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের কম্পিউটারগুলোকে সংযুক্তকারী বিশাল নেটওয়ার্ক। আমরা আমাদের প্রয়োজনীয় তথ্যটি কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সহজেই পেতে পারি। এছাড়া নিজস্ব উদ্ভাবন ও সংগৃহীত তথ্য প্রকাশ করতে পারি।
নিচে ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের কিছু মৌলিক ধাপ দেওয়া হলো—
১) search ইঞ্জিন যেমন— গুগল (google), ইয়াহু (yahoo), পিপীলিকা (pipilika) ইত্যাদি ব্যবহার করি।
২) যে বিষয়ের তথ্যটি অনুসন্ধান করছি সে বিষয় সম্পর্কিত “মূল শব্দটি” “Search Bar” এ লিখে “search” লেখাটিতে ক্লিক করি অথবা “Enter key” – তে চাপ দেই ।
৩) সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের যে তালিকাটি এসেছে সেখান থেকে ওয়েব সাইট বেছে নিয়ে প্রয়োজনীয় তথ্যটি সংগ্রহ করি।
৪) যতবার প্রয়োজন ততবার পূর্বের ধাপগুলো পুনরাবৃত্তি করি। অথবা আরও সুনির্দিষ্ট ‘মূল শব্দ' নির্বাচন করে প্রয়োজনীয় তথ্যটি অনুসন্ধান করি।
(২) কীভাবে তথ্য সংরক্ষণ করব
ইন্টারনেটে তথ্যটি অনুসন্ধানের পর প্রাপ্ত তথ্যটি আমরা খাতায় লিখে, ছবি তুলে, ভিডিও রেকর্ড করে সংরক্ষণ করতে পারি । বর্তমানে আমরা তথ্য সংরক্ষণের জন্য বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তি যেমন— পেন ড্রাইভ, সিডি, ডিভিডি, মেমোরি কার্ড ইত্যাদি ব্যবহার করি।
(৩) কীভাবে প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য বিনিময় করব ?
প্রযুক্তি ব্যবহার করে যে অন্যদের সাথে তথ্য বিনিময় করতে পারি তা আমরা চতুর্থ শ্রেণিতে শিখেছি। টেলিফোন বা মোবাইল ফোন ব্যবহার করে আমরা মানুষের সাথে কথা বলতে পারি। তথ্য আদান প্রদানের জন্য চিঠি লিখতে পারি। ক্যামেরার মাধ্যমে আমরা ছবি তুলে বা ভিডিও করে তথ্য বিনিময় করতে পারি। বর্তমানে খুদেবার্তা (এসএমএস), ইমেইল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম যেমন— ফেসবুক বা টুইটার ব্যবহার করে ইন্টারনেটের মাধ্যমেও তথ্য আদান প্রদান করতে পারি।
কাজ : তথ্য সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও বিনিময়
কী করতে হবে :
১. শিক্ষার্থীদের কয়েকটি দলে ভাগ করি।
২. কী ধরনের তথ্য সংগ্রহ করব, কোন উৎস থেকে কোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে সংগ্রহ করব এবং কীভাবে তা সংরক্ষণ করব দলে আলোচনার মাধ্যমে সে ব্যাপারে একটি পরিকল্পনা করি।
৩. পরিকল্পনা অনুযায়ী তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করি ।
৪. প্রাপ্ত তথ্য যন্ত্র বা প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবার সাথে বিনিময় করি।
আমরা চতুর্থ শ্রেণিতে স্ক্র্যাচের বিভিন্ন উপাদান ও তাদের কাজ সম্পর্কে জেনেছি। ব্লক-কোড দিয়ে কীভাবে প্রোগ্রাম তৈরি করতে হয় সে সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা পেয়েছি। এখন আমরা স্ক্র্যাচ প্রোগ্রাম ব্যবহার করে গাণিতিক সমস্যা সমাধান করার কৌশল জানবো ।
প্রশ্ন: ধারাবাহিক নির্দেশনা বা কোড অনুসরণ করে কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হয় ?
কাজ: ছক্কা দিয়ে শতক ছোঁয়া
কী করতে হবে:
১। নিচের ছবির মতো গোল হয়ে বসি ।
২। দলে একটি ছক্কা নিই ।
৩। একজন সহপাঠীকে খেলায় অংশগ্রহণকারীদের নাম ও প্রাপ্ত নম্বর লেখার দায়িত্ব দিই ।
৪। পর্যায়ক্রমে একজন একজন করে ছক্কা নিক্ষেপ করি ।
৫। ছক্কা নিক্ষেপকারীর নির্দেশনা অনুসারে যে সংখ্যাটি উঠবে অথবা সে সংখ্যার ১০ গুণ তার নামের পাশে লিখি ।
৬। এভাবে প্রত্যেকে ৫ বার করে ছক্কা নিক্ষেপ করি।
৭। প্রত্যেকের ৫ বারের ছক্কা নিক্ষেপের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করি।
৮। যার নম্বর ১০০ অথবা ১০০ এর সবচেয়ে কাছাকাছি হবে তাকে বিজয়ী ঘোষণা করি ।
খেলাটি শ্রেণিকক্ষে বা শ্রেণিকক্ষের বাইরে আমরা খেলতে পারি ।
শতক ছোঁয়া খেলায় বিজয়ী খেলোয়াড় কী কৌশল অবলম্বন করেছে?
১। এই খেলায় বিজয়ী হওয়ার জন্য কী কী বিষয় বিবেচনা করতে হয়েছে ?
২। বিজয়ী হওয়ার কৌশল নিয়ে সহপাঠীদের সাথে আলোচনা করি ।
শতক ছোঁয়া খেলায় আমরা বুঝতে পেরেছি যে, যৌক্তিক নির্দেশনা অনুসরণ করে সহজেই লক্ষ্যে পৌঁছানো যায় অর্থাৎ সমস্যার সমাধান করা যায়। কম্পিউটার নির্দেশনা বা কোড ইনপুট হিসাবে গ্রহন করে অনুরূপ সমস্যা সমাধান করতে পারে। যেমন- দুটি সংখ্যার তুলনা করা । আমরা স্ক্র্যাচে বিভিন্ন ধরনের ব্লক-কোড ব্যবহার করে দুটি সংখ্যার মধ্যে কোনটি বড় তা নির্ণয় করতে পারি।
কাজ : বড় সংখ্যা খুঁজে বের করি
কী করতে হবে :
১. প্রথমে স্ক্র্যাচ প্রোগ্রাম চালু করি ।
২. এরপর কোড এলাকার ‘ঘটনা’ (Events) থেকে ব্লকটি টেনে মাঝের স্ক্রিপ্ট এলাকাতে নিয়ে আসি ।
৩. এবার কোড এলাকা থেকে ‘ভ্যারিয়েবল’ (Variables)-এর ‘একটি ভ্যারিয়েবল তৈরি কর’ তে ক্লিক করে ‘সংখ্যা ১' নামে একটি ভ্যারিয়েবল তৈরি করি ।
৪. অনুরূপভাবে ‘সংখ্যা ২' নামে আরও একটি ‘ভ্যারিয়েবল' তৈরি করি ।
৫. কোড এলাকার ‘ভঙ্গি' (Looks) থেকে ব্লকটি এনে স্ক্রিপ্ট এলাকায় যুক্ত করি ।
৬. এবার ‘হ্যালো’ লেখার পরিবর্তন করে লিখি ‘সংখ্যা ১ কত ?
৭. এবার ‘অনুভব কর' (Sensing) থেকে ব্লকটিকে এনে আগের কোডগুলির নিচে যোগ করি ।
৮. এরপর ‘ভ্যারিয়েবল' (Variables) থেকে ‘সংখ্যা ১’কে টেনে এনে তোমার নাম কী? লেখার উপর ছেড়ে দিই ।
৯. এবার ‘ভ্যারিয়েবল' (Variables) থেকে ব্লকটিকে এনে আগের ব্লক গুলির নিচে যুক্ত করি।
১০. ‘আমার ভ্যারিয়েবল' লেখার উপর ক্লিক করে ‘সংখ্যা ১’ নির্বাচন করি ।
১১. এবার ‘অনুভব কর' (Sensing) থেকে ব্লক-কোডটি টেনে এনে ০ এর উপর ছেড়ে দিই ।
১২. অনুরূপভাবে ধাপ ৫ থেকে ১১ অনুসরণ করে ‘সংখ্যা ২' এর ভ্যারিয়েবল তৈরি করি ।
১৩. এবার ‘নিয়ন্ত্রণ’ (Control) থেকে এই ব্লকটিকে এনে আগের ব্লক গুলির সাথে যুক্ত করি ।
১৪. এখন ‘অপারেটর' (Operators) থেকে ব্লকটি টেনে এনে ছবির মত করে বসাই ।
১৫. ‘ভ্যারিয়েবল’ (Variables) থেকে ‘সংখ্যা ১’ও‘সংখ্যা ২’এনে আগের ব্লকটির মধ্যে বসাই ।
১৬. এবার কোড এলাকার ‘ভঙ্গি' থেকে ব্লকটিকে এনে নিচের মত বসাই।
১৭. এরপর ‘হ্যালো' লেখার স্থানে ‘বড় সংখ্যাটি হলো’ লিখি।
১৮. আবার ‘ভঙ্গি' থেকে ব্লকটি এনে পূর্বের ব্লকটির নিচে বসাই ।
১৯. এরপর ‘হ্যালো' লেখার স্থানে ‘ভ্যারিয়েবল’ থেকে ‘সংখ্যা ১’ এনে বসাই ।
২০. ধাপ ১৬ থেকে ১৯ অনুসরণ করে ছবির মতো করে বসাই এবং ‘হ্যালো’ লেখার স্থানে ‘ভ্যারিয়েবল’ থেকে ‘সংখ্যা ২’এনে বসাই ।
২১. এবার মঞ্চের উপরে ক্লিক করে পর্যবেক্ষণ করি।
২২. স্প্রাইটের প্রশ্নের উত্তর মঞ্চের নিচের দিকে ফাঁকা বক্সে লিখি ।
বক্সের ডান পাশের টিক চিহ্নে ক্লিক করি এবং ‘বড় সংখ্যাটি কত?' এর উত্তরের জন্য অপেক্ষা করি ।
সারসংক্ষেপ :
বড় সংখ্যাটি নির্ণয়ের জন্য অনেকগুলো ব্লক-কোড যৌক্তিকভাবে একত্রে সাজানোই হলো প্রোগ্রাম। আর কোনো নির্দিষ্ট কাজ বা সমস্যা সমাধানের জন্য কোড বা কোডসমুহকে যৌক্তিকভাবে সাজানোর প্রক্রিয়া-ই হলো প্রোগ্রামিং। পরবর্তীতে আমরা কোড ব্যবহার করে নানান ধরনের সমস্যা সমাধান করতে শিখবো।
১) তিনটি তথ্য সংরক্ষণ প্রযুক্তির নাম লেখ ।
২) কোন প্রযুক্তির সাহায্যে তথ্য বিনিময় করা যায় ?
৩) তথ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ ?
8) ইন্টারনেট কী ?
৫) বাংলাদেশে ব্যবহৃত তিনটি “Search engine” এর নাম লেখ ৷
৬) এ ব্লকটি কোথা থেকে নিতে হয়?
৭) দুইটি সংখ্যার মধ্যে ছোট-বড় নির্ণয় করার জন্য কয়টি ভ্যারিয়েবল প্রয়োজন হয়?
৮)‘হ্যালো' শব্দের পরিবর্তে ছোট-বড় সংখ্যা নির্ণয়ে কী লিখতে হয়?
১) “বাংলাদেশে ঘূর্ণিঝড় আসছে” এই তথ্যটি তুমি টেলিভিশন থেকে পেলে। এখন তুমি কী করবে ?
২) কীভাবে আমরা ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করব তা বর্ণনা কর ।
৩) কেন তথ্য খুঁজে পেতে, বুঝতে, মূল্যায়ন ও ব্যবহার করতে আমাদের যথাযথ দক্ষতা অর্জন করতে হবে ?
8) তথ্য বিনিময় না করলে কী হতে পারে ব্যাখ্যা কর।
৫) তোমার একজন বন্ধু জাপানে থাকে। তুমি তার সাথে তথ্য বিনিময় করতে চাও । কোন কোন উপায়ে তুমি তার সাথে তথ্য বিনিময় করতে পার? এর জন্য তোমার কী কী প্রযুক্তির দরকার হবে ? লেখ।
ক. প্রোগ্রাম তৈরি:
১) একটি নতুন স্ক্র্যাচ উইন্ডো খোল ।
২) দৃশ্যপট হিসাবে একটি সবুজ মাঠ যুক্ত কর ।
৩) স্প্রাইট হিসাবে একটি প্রজাপতি যুক্ত কর ।
৪) বিভিন্ন ব্লক-কোড ব্যবহার করে প্রজাপতিটিকে উড়াও ।
৫) তোমার অ্যানিমেশনে উপযুক্ত শব্দ যুক্ত কর।
খ. ছোট সংখ্যা নির্ণয়:
১) ছোট সংখ্যা নির্ণয় করার জন্য স্ক্র্যাচে একটি প্রোগ্রাম তৈরি কর ।